রিজার্ভ চুরি : ৪টি মামলা চলবে নিউইয়র্কের আদালতে
প্রকাশিত : ১৩:০২, ২৪ মার্চ ২০২০
রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা ৫টি পৃথক মামলার মধ্যে ৪টি নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট আদালতে চলবে। মামলাগুলো ওই আদালতে চলতে পারে না মর্মে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশন (আরসিবিসি), সোলায়ার রিসোর্ট ও ক্যাসিনো, মাইডাস রিসোর্ট ও ক্যাসিনো এবং অন্যদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ওই আদালত। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রিজার্ভ চুরির মামলা যুক্তরাষ্ট্রে চলতে পারে না বলে রিজাল ব্যাংকসহ অন্যরা যে আবেদন করেছিল, নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট তা খারিজ করে দিয়েছেন। গত ২০ মার্চ আদালত এমন রায় দেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, মামলার বিষয়বস্তু সংশ্নিষ্ট আদালতের এখতিয়ার-বহির্ভূত দাবি করে আরসিবিসিসহ অন্যদের আবেদন ফোরাম নন কনভিনিয়েন্স ডকট্রিন মর্মে আদালত খারিজ করেছেন।
যদিও ফিলিপাইনের গণমাধ্যম ইনক্যোয়ার এক প্রতিবেদনে লিখেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের আবেদনই আদালত খারিজ করেছে। ইনক্যোয়ার জানায়, বিবাদী রিসোর্ট অ্যান্ড ক্যাসিনোর মালিক কোম্পানি ব্লুবেরি রিসোর্ট গ্রুপ সোমবার সেদেশের স্টক এক্সচেঞ্জকে এ তথ্য জানিয়েছে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে গতকাল যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে, তাতে বলা হয়- যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট এ বিষয়ে আদেশে উল্লেখ করেছে, এ (রিজার্ভ) চুরি নিউইয়র্কে অবস্থিত মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে হয়েছে এবং সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে, জালিয়াতির মাধ্যমে পেমেন্ট অর্ডার, বিভিন্ন করেসপন্ডেন্ট অ্যাকাউন্টে চুরিকৃত অর্থের লেনদেন এবং এ সকল অ্যাকাউন্ট থেকে দেশের বাইরে অর্থ পাঠানো- সবই নিউইয়র্ক থেকে সংঘটিত হয়েছে।
ফেডারেল রিজার্ভে ব্যাংক অব নিউইয়র্কের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মিস এনি বাউমের ঘোষণাকে উদ্ৃব্দত করে আদালত তার রায়ে আরও বলেন, ফেডারেল রিজার্ভ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি রয়েছে, যাতে ফেডারেল রিজার্ভ বাংলাদেশ ব্যাংককে মামলা-মোকদ্দমার ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আদালত বলেন, জনস্বার্থ বিবেচনায় নিউইয়র্কে এ মামলা চলতে পারে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের রেকেটির ইনফ্লুয়েন্সড অ্যান্ড করাপ্ট অর্গানাইজেশন অ্যাক্ট (আরআইসিও)-এর আওতায় আরসিবিসি ব্যাংক ও জড়িত অন্যদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা অভিযোগটি টেকনিক্যাল বিষয় বিবেচনায় ফেডারেল আদালত বিচারের জন্য গ্রহণ করেননি বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এ মামলাটিই নিউইয়র্ক স্টেট আদালতে দায়ের করা যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, আদালতের এমন সিদ্ধান্তের ফলে আরসিবিসি, সোলায়ার, মাইডাস এবং অন্যান্য বিবাদীর বিরুদ্ধে প্রতারণা, চুরি, রূপান্তরের ষড়যন্ত্র এবং অন্যান্য অভিযোগের বিষয়ে নিউইয়র্কের আদালতের বিচারিক এখতিয়ারভুক্ত প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক আরসিবিসি এবং অন্যান্য বিবাদীর কাছ থেকে ক্ষতি আদায়ের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউর প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা পাঁচটি মামলার সবই ওই আদালতে চলতে পারে না মর্মে আবেদন করেছিল আরজেবিসিসহ অন্য বিবাদীরা। কিন্তু আদালত চারটি মামলার ক্ষেত্রে তাদের আবেদন খারিজ করেছেন। যে অভিযোগের বিষয়ে আবেদন গ্রহণ করেছেন অর্থাৎ যে মামলা ওই আদালতে চলবে না, সেটিও অন্য আদালতে করা যাবে। এসব মামলার মাধ্যমে বিবাদীদের কাছ থেকে রিজার্ভ চুরির ক্ষতিপূরণ পাওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।
আরও পড়ুন